Business is booming.

তটস্থ দেশ-গাড়িতে আগুনের হিড়িকে

দ্বিতীয় দফায় যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা বেড়েছে এক দিনে গড়ে ১৪ গাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা চোরাগোপ্তা হামলাকারীদের ধরতে পারছে না পুলিশ অবরোধে র‌্যাবের পাহারায় দূরপাল্লার বাস চলবে

17

বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধ কর্মসূচিতে বিপুল সংখ্যক র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি (বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ) নামানো হলেও তাদের রণাঙ্গনের প্রস্তুতির মধ্যেই যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরসহ নানা ধরনের নাশকতার ঘটনা বেড়েছে। আমাদের সিনিয়র রিপোর্টার, ঢাকা জানান, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রথম দফার তিন দিনের অবরোধে দুর্বৃত্তরা ৩৩টি গাড়িতে আগুন দেয়। এ হিসাবে প্রথম দফায় এক দিনে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে ১১টি। তবে দ্বিতীয় দফার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের শেষ দিন সোমবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ২৬টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে প্রথম দিন যানবাহনের অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে ১৯টি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাজ সাজ প্রস্তুতির মধ্যে নাশকতার ঘটনা বাড়ায় পরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। অগ্নিসংযোগকারীরা দ্রুত ধরা না পড়ায় জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়েছে যানবাহন শ্রমিকরা।

মহাসড়কে নিরাপত্তার অনিশ্চয়তায় অবরোধ চলাকালে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল একরকম বন্ধ ছিল। রেল ও নৌপথে যাত্রী স্বল্পতা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভাবিয়ে তোলে। কাক্সিক্ষত আয় না পাওয়ায় লঞ্চ মালিকরা অনেকে তাদের ট্রিপ কমিয়ে দেন। অবরোধে পণ্য পরিবহণ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় খাদ্যসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম হু-হু করে বাড়ছে। এ পরিস্থিতি চলমান থাকলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উদ্বিগ্ন এ পরিস্থিতিতে বাসে আগুন ঠেকাতে র‌্যাবের পাহারায় দূরপাল্লার বাস চলাচলের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সোমবার এক ভিডিওবার্তায় র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, কয়েকটি কোম্পানির বাস একটি নির্দিষ্ট সময়ে একত্রে করে র‌্যাবের পাহারায় ঢাকা ছাড়বে। এ সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে বাসমালিকদের সঙ্গে র‌্যাবের আলোচনা চলছে।

তিনি বলেন, অবরোধে নাশকতা-সহিংসতা ঠেকাতে দেশব্যাপী ৪৬০টি টহল দল কাজ করছে। তারা সম্মিলিত টহল দিচ্ছে ও গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। পাশাপাশি পণ্য ও যাত্রী পরিবহণের জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছে।

এদিকে, সোমবার দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তানে একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে বাসটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আগুনে কেউ দগ্ধ বা হতাহত হয়নি। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, দুপুর ২টা ৫ মিনিটের দিকে গুলিস্তান বঙ্গবন্ধু স্কয়ার হল মার্কেটের সামনে বাসে আগুনের খবর পায় তারা। ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার লিমা খানম বলেন, রাজধানীর গুলিস্তানে বিকল্প পরিবহণের একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

এছাড়া রাত সাড়ে ৮টার দিকে খিলক্ষেতে আকাশ পরিবহণের একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে কুর্মিটোলা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

একই দিন বন্দরনগরী চট্টগ্রামে দুটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে একটি নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন আতুরার ডিপো এলাকায়। অপরটি জেলার আনোয়ারা উপজেলার চাতুরী চৌমুহনী স্টেশনে। আনোয়ারা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ফায়ার ফাইটার মোহাম্মদ সাজিম জানান, সোমবার ভোরে উপজেলার
চাতুরী চৌমুহনী এলাকায় মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসে কে বা কারা আগুন দেয়। খবর পেয়ে ভোর ৫টা ৫ মিনিটে দমকল কর্মীরা সেখানে ছুটে যান। দুটি ইউনিট ৪০ মিনিট চেষ্টা চালিয়ে ৫টা ৪৫ মিনিটে আগুন

নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।

অপরদিকে, ভোর ৫টায় নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন আতুরার ডিপো এলাকায় চট্টগ্রাম-হাটহাজারী সড়কে পার্কিংয়ে থাকা একটি সিএনজি অটোরিকশায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় একটি ট্রাক ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। পাঁচলাইশ থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা অটোরিকশায় অগ্নিসংযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

গাজীপুরে দুই যাত্রীবাহী বাসে আগুন

আমাদের গাজীপুর ও কালিয়াকৈর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুরে কেপি পরিবহণে ও গাজীপুর মহানগরের সদর থানাধীন শিববাড়ির-শিমুলতলী সড়কে বটতলা এলাকায় সড়কের পাশে পার্কিং করা গাজীপুর পরিবহণে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

সোমবার কালিয়াকৈরের শফিপুরের কেপি পরিবহণে ভোর রাত ৪টায় ও মহানগরের বটতলা এলাকায় রাত ২টার দিকে এ আগুনের ঘটনা ঘটে।

কেপি পরিবহণের বাসের চালক হাবিবুর রহমান জানান, কেপি পরিবহণের (ঢাকা মেট্রো জ ০৪-০৩৬৪) একটি বাস দিয়ে প্রতিদিন ভোরে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি থেকে শ্রমিক নিয়ে কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর এলাকার একটি কারখানায় যান। প্রতিদিনের মতো আজও ভোরে কোনাবাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে সফিপুর বাজারে পূর্ব পাশে আরেকটি বাসের কারণে তার বাসটি গতিরোধ করতে হয়। এ সময়ে চার-পাঁচজন যুবক বয়সের ছেলে দৌড়ে তার বাসে ওঠেন। এরপর তারা গাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, চার-পাঁচজন যুবক যখন বাসে উঠে তখন আমি তাদের বলেছি, ভাই আমি তো কোনো যাত্রী নেব না, আপনারা কেন উঠেছেন? তখন তারা আমাকে বলে তোর কোথাও যাওয়া লাগবে না। এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের হাতে থাকা বোতল থেকে তেল ছিটিয়ে দেয়। পরে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। আমি অল্পের জন্য দৌড়ে নেমে গিয়ে বেঁচে গেছি।

কালিয়াকৈরে ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মো. রায়হান জানান, আগুন লাগার খবর পেয়ে দমকল বাহিনীর একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। তবে আগুন নিভাতে নিভাতে গাড়ির ভিতরের এবং সামনের অধিকাংশই পুড়ে যায়।

কালিয়াকৈরে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আকবর আলী খান জানান, ভোর রাতে ঘটনাটি দুর্বৃত্তরা ঘটিয়েছে। তাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হবে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে।

অপরদিকে, রোববার দিবাগত রাত ২টার দিকে গাজীপুর মহানগরের সদর থানাধীন শিববাড়ির শিমুলতলী সড়কে বটতলা বিলাশপুর এলাকায় সড়কের পাশে পার্কিং করা গাজীপুর পরিবহণের যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল আরেফিন জানান, রাত ২টার দিকে সড়কের পাশে পার্কিং করে রাখা বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে জয়দেবপুর ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

আগুনের বিষয়টি নিশ্চিত করে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর থানার ওসি জিয়াউল ইসলাম বলেন, রাত ২টার দিকে শিববাড়ি-শিমুলতলী সড়কে গাজীপুর পরিবহণ নামের একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে বাসটি পুড়ে যায়। কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে আমরা তদন্ত করছি।

এছাড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথের টঙ্গী-জয়দেবপুর স্টেশনের মাঝামাঝি সামান্তপুর এলাকায় রেললাইনে টায়ার জ্বালিয়ে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করে পালিয়ে গেছে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। সোমবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে।

জয়দেবপুর জংশনের স্টেশন মাস্টার মো. হানিফ আলী সংবাদটি নিশ্চিত করে বলেন, দুষ্কৃতিকারীরা জয়দেবপুর-টঙ্গী স্টেশনের মাঝামাঝি ধীরাশ্রম এলাকায় রেললাইনের ওপর টায়ার জ্বালিয়ে আগুন দেয়। এসময় তারা রেললাইন অবরোধের চেষ্টা করে। খবর পেয়ে রেলওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে দুষ্কৃতিকারীরা পালিয়ে যায়।

জয়দেবপুর রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম জানান, ভোর সাড়ে ৬টার দিকে জয়দেবপুর-টঙ্গী রেল সড়কের সামান্তপুর এলাকায় ৭-৮ জন লোক রেললাইনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই তারা পালিয়ে যায়। পরে টায়ারের আগুন নিভিয়ে রেললাইন থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। এ ঘটনায় ট্রেন চলাচলে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি।

গাড়ি ভাঙচুর, আহত ৫ আটক ৭

ফেনী প্রতিনিধি জানান, এক দফা দাবিতে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা দ্বিতীয় দফা অবরোধের শেষ দিন ফেনীতে যুবদলের বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দিয়েছে পুলিশ। এরপর বেশকিছু গাড়ি ভাঙচুর করেছে অবরোধ সমর্থকরা।

সোমবার সকালে শহরের ইসলামপুর রোডের দলীয় কার্যালয় থেকে ফেনী জেলা যুবদলের সভাপতি জাকির হোসেন জসিম ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খন্দকারের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের মূল সড়কে উঠার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে যুবদলের ৫-৭ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন নেতারা। এছাড়াও গত রাতে সাতজন নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ বিভিন্ন জায়গা থেকে।

এ সময় মিছিলে উপস্থিত ছিলেন জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি গিয়াস উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক নঈম উল্লাহ চৌধুরী বরাত, দপ্তর সম্পাদক আল ইমরান, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক জাহিদ হোসেন বাবলু, সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিন সোহাগ, ফেনী সদর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক নিজাম উদ্দিন মাস্টার, সদস্য সচিব শাহাদাত হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদুল ইসলাম রাহাত, সোনাগাজী উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব ইমাম হোসেন প্রবিরসহ যুবদলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা।

ফেনী জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খোন্দকার বলেন, অবরোধের সমর্থনে যুবদলের নেতাকর্মীরা জেলা বিএনপি দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিল নিয়ে একটু সামনে অগ্রসর হলে পুলিশ বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে মিছিলটি অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের ধস্তাধস্তিতে জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি গিয়াস উদ্দিনসহ ৫-৭ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

এছাড়া স্বেচ্ছাসেবকদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সকাল ১০টার দিকে শহরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে অবরোধকারীরা সরে পড়ে। এছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মহিপালে ভোরে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে যুবদলের নেতাকর্মীরা।

এদিকে, ফেনীর আদালত প্রাঙ্গণে অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করেন বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা।

অপরদিকে অবরোধের কারণে জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কে সীমিত কিছু সিএনজি চলাচল করলেও দূরপাল্লার কোনো যাত্রীবাহী বাস ছেড়ে যায়নি। পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান কিছু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচল করছে। এদিকে, ফেনী, দাগনভুইয়া, বসুরহাটগামী কিছু সংখ্যক বাস চলাচল করতে দেখা গেছে।

ফেনী মডেল থানার এসআই মো. ইমরান হোসেন জানান, বিচ্ছিন্নভাবে অবরোধকারীরা মিছিল করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে। এরপর শহরের তাকিয়া রোডে কয়েকটি ট্রাক ও একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাঙচুর করে অবরোধকারীরা।

ফেনীর পুলিশ সুপার জাকির হাসান বলেন, জনগণের জানমাল রক্ষায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। নাশকতা করতে চাইলে পুলিশের পক্ষ থেকে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। শহরে ও মহিপালে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ টহল অব্যাহত রয়েছে।

বগুড়ায় অবরোধকারীধের টার্গেট উন্নয়ন প্রকল্প

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া জানান, বগুড়ায় অবরোধকারীরা উন্নয়ন প্রকল্পে লক্ষ্যস্থির করেছে। এ অঞ্চলে সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী সাসেক-২ প্রকল্পের কাজ বাধাগ্রস্ত করতে তারা সোমবার বগুড়াÑঢাকা মহাসড়কে পেট্রোল বোমা হামলা চালায় সড়ক নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত একটি ওয়াটার ট্যাংকলরিতে। এতে ওয়াটার ট্যাংকলরিটি পুড়ে যায়। আর এতে নির্মাণ শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। অপরদিকে অবরোধের এ দফার শেষ দিনে আগের দিনের তুলনায় মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বেড়েছে। শহর থেকে উপজেলা পর্যায়ে জীবনযাত্রা ছিল স্বাভাবিক। শহর এলাকায় ছিল যানজট। আগের দফার অবরোধে বগুড়ায় কাভার্ডভ্যান ও ট্রাক পোড়ানো হলেও এবার টার্গেট করেছে উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত গাড়ি।

এদিকে, অবরোধের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ শহরের মাটিডালি ও বনানী এলাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।

রাজশাহীতে পেট্রোল বোমা ছুড়ে পণ্যবাহী ট্রাকে আগুন

আমাদের রাজশাহী অফিস জানায়, রাজশাহীর মোহনপুরে পণ্যবাহী ট্রাকে আগুন দেওয়া হয়েছে। সোমবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে রাজশাহীর মোহনপুরে উপজেলার মৌগাছি ইউনিয়নের নন্দনহাট মোড়ের পাশে পেট্রোল বোমা মেরে ট্রাকটিতে আগুন দেয় অবরোধ সমর্থকরা। এতে ট্রাকের সামনের অংশ পুড়ে গেছে। পরে স্থানীয়রা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

মোহনপুর থানার ওসি হরিদাস মণ্ডল বলেন, রাজশাহী থেকে মাছের খাবার নিয়ে একটি পণ্যবাহী ট্রাক বাগমারার উদ্দেশে যাচ্ছিল। এ সময় রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের মোহনপুর উপজেলার নন্দনহাট এলাকায় পৌঁছালে ৫টি মোটর সাইকেলে এসে অবরোধ সমর্থকরা ট্রাকে হামলা করে। তারা প্রথমে একটি হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এরপর তারা ট্রাকে ভাঙচুর করে পেট্রোল বোমা ছুড়ে আগুন দিয়ে চলে যায়। ওসি বলেন, ট্রাকে তিনজন ছিল। তারা সবাই ভয়ে দৌড়ে পাশের বিলে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা বালু ও পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

অন্যদিকে, অবরোধের প্রথম দিনের মতো সোমবার সকালেও ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি বলে খবর পাওয়া গেছে। সকালে ঢাকার রাস্তায় তুলনামূলকভাবে কম যান চলাচল করছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কিছুটা বাড়ে। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও প্রবেশদ্বারগুলোতে পুলিশের পাশাপাশি সরকার সমর্থকদের অবস্থান চোখে পড়ে। তবে বিএনপির তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।

সোমবার সকালে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবরোধবিরোধী মিছিল ও সমাবেশ করতে দেখা গেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের। ঢাকার গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ি, গাবতলী, কুড়িলসহ গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মিছিল-সমাবেশের পাশাপাশি লাঠিসোটা হাতে বসে থাকতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের। নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর এবং নরসিংদীতেও সরকার সমর্থকদের এমন অবস্থান চোখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার সংবাদদাতারা। তবে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিএনপি নেতাকর্মীদের তেমন কোনো উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি।

সকালে ঢাকার লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, আদাবর, শ্যামলী, গাবতলী, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, ধানমণ্ডি, পান্থপথ, গ্রিনরোড, কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও, মহাখালী, গুলশান, মিরপুর, বাংলামোটর, কাকরাইল, পল্টন, মতিঝিল, যাত্রাবাসীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে অল্পকিছু যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান এবং পিকআপ ভ্যান চলাচল করতে দেখা গেছে। অবরোধের আগের দিনের মতোই ঢাকায় রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা বেশি চোখে পড়ে। তবে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা তুলনামূলক কম দেখা গেছে।

আগের অবরোধের মতোই সোমবার সকালে ঢাকার গাবতলী, মহাখালী এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়তে দেখা যায়নি। তবে সকালে ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোর উদ্দেশে স্বল্প দূরত্বের কিছু বাস ছাড়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাসের টিকিট বিক্রেতারা। তারা বলছেন, অবরোধের কারণে পর্যাপ্ত যাত্রী না পাওয়ায় দূরপাল্লার বাসগুলো ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

সোমবার সকালে ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনে স্বাভাবিক দিনের মতোই ট্রেন চলাচল করতে দেখা গেছে। নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ীই সব ট্রেন ছাড়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। তবে স্টেশনে যাত্রীদের সংখ্যা স্বাভাবিক দিনের চেয়ে কম দেখা গেছে।

গত কয়েকদিনের মতোই সোমবার সকালেও ঢাকার প্রধান সড়কগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় র‌্যাব ও পুলিশের বেশ কয়েকটি দলকে টহল দিতে দেখা গেছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মোড় এবং ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে পুলিশের সতর্ক অবস্থান ছিল।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.