Business is booming.

মায়ের কাছেই থাকবে জাপানি দুই শিশু, আপিল বিভাগ

17

আদালত প্রতিবেদক

জাপানি দুই শিশুকে জিম্মায় নিতে তাদের পিতার করা পারিবারিক আদালতের মামলা তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছে আপিল বিভাগ। এই সময়ে সন্তানরা তাদের মা জাপানি নাগরিক ডা. নাকানো এরিকোর কাছে থাকবে। এর আগে ইমরান শরীফ শিশুদের নিজের কাছে রাখাকে আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করেছে আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের রায় বাতিল করে এই আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। তবে ইমরান শরীফ সন্তানদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাবেন বলেও আদেশে বলা হয়েছে।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দুই শিশুর জিম্মা চেয়ে নাকানো এরিকোর আপিল আবেদনের শুনানির পর রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ রায় দেন।

আদালতে জাপানি মায়ের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি ও আহসানুল করিম। তাদের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির। অন্যদিকে বাবার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ।

এর আগে ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মামলাটি চলমান প্রক্রিয়াধীন রেখে রায় প্রদান করেন।

হাইকোর্টের তার রায়ে জাপানি মা ডা. নাকানো ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত আমেরিকান নাগরিক বাবা ইমরান শরীফের কাছেই বড় দুই কন্যা শিশুকে রাখার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে আদালত বলেন- জাপানি মা বছরে তিনবার বাংলাদেশে এসে ১০ দিন করে দুই শিশুর সঙ্গে থাকতে পারবেন। এছাড়াও প্রতি মাসের দুই সপ্তাহ পর ভিডিও কলে শিশুরা মায়ের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। দেশে থাকাবস্থায় মায়ের খরচ বাবাকেই বহন করতে বলেছেন আদালত। পাশাপাশি এরিকো নাকানোকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে ইমরান শরীফকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

তবে ছোট আরেকটি কন্যা শিশুকে নিয়ে করা বাবার রিট খারিজ করে দেন আদালত।

পরে উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৫ ডিসেম্বর আপিল দায়ের করেছিলেন শিশুদের মা ডা. এরিকো নাকানো।

প্রসঙ্গত, দুই মেয়েকে হাইকোর্টে হাজির করাতে রিট করেছিলেন জাপান থেকে আসা ডা. এরিকো নাকানো। ওই রিটের প্রেক্ষিতে গত ১৯ আগস্ট শরীফ ইমরানের জিম্মায় থাকা দুই শিশু সন্তানকে ৩১ আগস্ট হাজির করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন আদালত।

পরে দুই শিশুকে নির্যাতনের অভিযোগে তাদের মা পৃথক মামলা দায়ের করলে শিশুদের উদ্ধার করে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডি। এরপর তাদেরকে তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছিলো।

এরপর শরীফ ইমরানের জিম্মা থেকে দুই শিশু সন্তানকে সিআইডি কর্তৃক উদ্ধারের পর গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে উন্নত পরিবেশে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ৩১ আগস্ট শিশুদেরকে হাইকোর্ট হাজির করতে এবং এ সময়ের মধ্যে আদালত উভয়পক্ষের আইনজীবীদের বিষয়টি সমাধান করতে ভূমিকা রাখার প্রচেষ্টা চালাতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।

পরে গত ৩১ আগস্ট বাংলাদেশী বাবা ও জাপানী মায়ের দুই শিশুকে তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পরিবর্তে গুলশানস্থ বাসায় একসঙ্গে বসবাস করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ঢাকার সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পদের একজনকে বিষয়টি তদারকির নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ডিএমপি কমিশনারকে তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিলো।

উক্ত সময়ের মধ্যে তাদেরকে বিষয়টির সুরাহা করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন আদালত। পরবর্তীতে কয়েক দফায় দুইপক্ষের আইনজীবীদের আলোচনায় বসার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। তবে এ বিষয়ে কোন সুরাহা না হওয়ায় মামলাটি পুনরায় শুনানিতে ওঠে।

এদিকে জাপানে থাকা তার তৃতীয় ছোট কন্যা শিশুকে হাজির করানোর ও দেখা করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে পৃথক আরেকটি রিট দায়ের করেন শিশুদের বাবা ইমরান শরীফ।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.