Business is booming.

আটক প্রতারক তৈমুর হোসেন

142

চেহারার গড়ণ আর কথার ধরণ সত্যি মুগ্ধ হওয়ার মতো। পেশা তার একেক জায়গায় একেক রকম। কোথাও সে চাকুরীজীবি কোথাও চাকুরীদাতা। তবে আসলে সে একজন প্রতারক। তার প্রতারণার শিকার হয়ে পথেও বসেছেন অনেকে। কিন্তু কতদিন? সবাইকে একদিন তার পাপের সাজা ভোগ করতে হয়। তৈমুর হোসেন নামে এই মহাপ্রতারক অবশেষে ধরা পড়েছে পুলিশের জালে।

 

বুধাবার (২৬ জুলাই)  রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি থানার সামনে ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন। তৈমুর হোসেন নামে এক প্রতারক আটক হয়েছেন এই থানায়। এমন খবরে তার শাস্তির দাবি নিয়ে থানার সামনে হাজির তারা। এই ব্যক্তিদের সঙ্গে তৈমুরের সম্পর্ক এক রকম নয়। তবে তার প্রতারণার ফাঁসে এদের প্রত্যেকে ক্ষতিগ্রস্ত। কেউ কেউ নি:স্ব। বেসকারি প্রতিষ্ঠান নোয়াপাড়া গ্রæপের বিক্রয় ও বিপনন বিভাগের প্রধান ছিলেন তৈমুর। প্রতারণার মাধ্যমে কোম্পানীর বড় অংকের টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেন তিনি।

একে একে তার সব অপকর্ম বেরিয়ে আসে। তার অধিনস্ত যারা ছিলেন তারা বলেন- উনি ছিলেন আমার বিপনিক বস। উনি আমাকে যেভাবে বলতেন তার কথা আমার শোনা লাগত। উনি আমাকে ম্যাসেজে দিতেন মোবাইলে, যে মালটা দেওয়া হইছে টাকাটা আপনি অমুক একাউন্টে পাঠান।

প্রতারক তৈমুর

আরেকজন বলেন- আমি বলি স্যার আমি আপনার ব্যক্তিগত একাউন্ডে কেন টাকা দেব? তখন উনি বলেছিলেন টাকা না দিলে তোমাকে চাকরি থেকে বের করে দেব। অন্য একনজন কর্মচারী বলেন- জানতে চাইলে উনি আমাকে হুমকি ধামকি দেন। বলে যে আপনার অত জানা লাগবেনা।

সহকারী ম্যানেজার সেলস এন্ড মার্কেটিং নোয়াপাড়া গ্রæপ তোফাজ্জল হোসেন সুমন বলেন- উনি আমার কোম্পানীর সিম ল্যাপটপ কোন কিছু জমা না দিয়া, মার্কেট কাউকে বুঝাইয়া না দিয়া উনি হঠাৎ কইরা মোবাইল বন্ধ কইরা দিছে। কারো ফোন ধরেনা, কারো সাথে যোগাযোগ করেনা। তখনই আমার ম্যানেজমেন্ট ভাবলো যে, মার্কেটে কোন অনিয়ম হইছে কিনা, দ্রæত মার্কেটে মুভ করো। তো আমি মার্কেটে গেলাম ভিজিট কইরা দেখলাম যে, উনি আমার মার্কেটিং অফিসারদের মাধ্যমে ওনার ব্যক্তিগত একাউন্টসহ বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের একাউন্টে কোম্পানীর দশ কোটিরও বেশি টাকা নিয়া নিচে।

এখানেই শেষ নয়। তার কথার মিষ্টতা দিয়ে নানা জায়গায় নানা ভাবে প্রতারণার জাল বিস্তার করেছে তৈমুর। তার সঙ্গে যৌথ ব্যবসা করতে গিয়ে নি:স্ব হয়েছেন নোয়াপাড়া গ্রæপের তার এক সময়ে সহকর্মী ও পরবর্তী সময়ে ব্যবসায়িক পার্টনার। মাত্র এক মাসে মূল উদ্যোক্তাকে সরিয়ে নিজ নামে খুলেছেন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান।

ব্যবসায়িক পার্টনার এরশাদ

তার ব্যবসায়িক পার্টনার এরশাদ বলেন- তাকে আমি নিই। নেয়ার পরে সে তার এলাকার স্থানীয় লোকদের প্রয়োগ করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড দ্বারা এমন কি তার আত্মীয় স্বজনসহ আমার জিনিস পত্র আমার সকল স্থাবর অস্থাবর দীর্ঘ তিন বছরে আমার যে সম্পদ ছিল, সে সম্পদসহ সব তার নতুন নামে নামকরণ করে ফেলে। আমার গার্মেন্টস সে একেবারে ভ্যানিস করে ফেলে।

তৈমুর তার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের সঙ্গেও প্রতারণা করেছেন। মাসের পর মাস বেতন না দিয়ে উধাও তৈমুর। কতটা নি:স্ব অবস্থায় তারা পড়েছেন সে সব কথা শুনলে চোখে জল আসার মতো।

কর্মচারী বলেন- এমন অবস্থায় পড়ছি পাচ মাস ধইরা বাড়িওয়ালার ভাড়া দিতে পারি নাই। বাড়িওয়ালা বিভিন্ন ধরনের কথা বলে। বাচ্চার দুধ কেনার জন্য লাস্টে গিয়া দোকানদারের পায়ে ধরছি।

অন্য কর্মচারী বলেন- আজ না হয় কাল করতে করতে এখন আমাদের সবার মোবাইল নাম্বার ব্ল্যাক লিস্টে ফালাইয়া রাখছে।

আরেক কর্মচারী বলেন- ২৫শে মার্চ ডাইকা বলছে যে আপনারা ডিউটি করেন, আপনাদের ঈদ বোনাস গত দুই মাসের বেতন এবং আগামী যতদিন ডিউটি করবেন সব টাকা পয়সা আমি প্রদান করবো।

তৈমুরের এই প্রতারনামূলক কাজে যারা বুদ্ধি ও পরামর্শ দিয়ে আসত তাদের মধ্যে অন্যতম মিজানুর রহমান বাবুল। তার স্ত্রী সাবেক কাউন্সিলর ছিলেন। রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রী এমপির নাম ভাঙিয়ে লোকজনদের হুমকি ধামকি এবং মারধর করত। তার নামে টঙ্গি থানায় বেশ কিছু মামলা রয়েছে। অথচ আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে সে পার পেয়ে যায়। অপরজন হচ্ছে মানিক। তৈমুরের অর্থ আত্মসাতের মূল পরিকল্পনাকারী। কথায় কথায় সেও ক্ষমতার দাপট দেখায়।

 

নোয়াপাড়া গ্রুপের করা প্রতারণার মামলায় অবশেষে এই প্রতারক ধরা পড়েছে পুলিশের হাতে। আদালতের মাধ্যমে তাকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

 

ওসি ধানমন্ডি থানা ডিএমপি মো: পারভেজ ইসলাম

 

এ বিষয়ে ওসি ধানমন্ডি থানা ডিএমপি মো: পারভেজ ইসলাম বলেন- আমরা আসামীকে গ্রেপ্তার করার পরে তাকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করি। কিছু তথ্য দেয় কিছু তথ্য দেয়না। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমাদের সময় প্রয়োজন। এ জন্য আমরা সাতদিন রিমান্ডসহ আসামীকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করি। আদালত তাকে দুই দিনের রিমান্ড মনজুর করেছেন। মামলার তদন্ত চলছে, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে আমরা আসল তথ্যটা বের করতে পারব।

এ রকম অনেক তৈমুর আমাদের সমাজে বিরাজ করছে। প্রতারণা করে সাধারণ মানুষদের নি:স্ব করে দিচ্ছে। আশা করি সবাই যোগ্য শাস্তি পাবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.