Business is booming.

ফেঁসে যাচ্ছে নামিদামি হাসপাতালও

83

করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়ার নামে প্রতারণা, জালিয়াতি, রোগী হয়রানি, অতিরিক্ত বিল নেওয়া, ভুয়া সার্টিফিকেট প্রদানসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ফেঁসে যাচ্ছে দেশের অনেক নামিদামি হাসপাতাল। শুধু তাই নয় এমন অভিজাত ও তারকা স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত অনেক বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হলেও নবায়ন করেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ঢাকার এমন অন্তত দুটি বেসরকারি হাসপাতালের রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ গত ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে এখন পর্যন্ত নবায়ন করেনি। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, নবায়নের আবেদন করা হয়েছে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। সম্প্রতি রিজেন্ট হাসপাতালের ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট বাণিজ্য ও প্রতারণা ফাঁস হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে অন্যরাও। এরই মধ্যে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে গুলশানে সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালেও।

এ প্রতিষ্ঠানটি সরকারের অনুমোদন না নিয়েই করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) পরীক্ষা করাচ্ছিল বলে র‌্যাবের অভিযোগ। এ সময় হাসপাতালটির একজন কর্মকর্তাকে আটকও করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে, বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক ওনারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ফারাবী জেনারেল হসপিটালের (ধানমন্ডি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান ভুইয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান হওয়া জরুরি। এটা আমরাও সমর্থন করি। কিন্তু অভিযানের নামে কোনো ধরনের আতঙ্ক কিংবা হয়রানির সৃৃষ্টি করলে তো আর সেবা দেওয়া সম্ভব হবে না। আমরা চাই অভিযান চলুক।

তবে সেবা কার্যক্রম যাতে কোনোভাবেই ব্যাহত না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখার জন্য আমরা সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাই। কভিড-১৯ সংক্রমণ শুরুর দিকে দেশের বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো সেবায় এগিয়ে না এলেও এখন তো প্রায় সবাই এগিয়ে এসেছে। আর লাইসেন্সের ব্যাপারে তিনি বলেন, অনেক সময় লাইসেন্স রিনিউয়ের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় লেগে যায়। আবার কখনো কখনো আবেদন করার পর দীর্ঘ সময় কেটে যায় সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরের সাড়া পেতে। এতে সময় চলে যায়। আবার কখনো অর্থ সংকটের কারণে ছোট ছোট ক্লিনিকগুলো রেজিস্ট্রেশন ফি সময়মতো জমা দিতে পারে না। এতেও লাইসেন্স পেতে দেরি হয় বলে তিনি জানান।

এদিকে রিজেন্ট হাসপাতালের এমন জালিয়াতি ও ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট বাণিজ্য ফাঁস হওয়ায় ইতিমধ্যেই ইতালিগামী ১২৫ জন প্রবাসী বাংলাদেশিকে সে দেশের এয়ারপোর্র্ট থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাদের বিমান থেকে নামতেই দেওয়া হয়নি। ইতালির কয়েকটি জাতীয় দৈনিক, টেলিভিশন ও কাতারভিত্তিক প্রভাবশালী  টেলিভিশন আলজাজিরাসহ বিশ্ব গণমাধ্যমেও রিজেন্ট হাসপাতালের এসব অপকর্মের খবর ফলাওভাবে প্রচারিত হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশ ভ্রমণে বাংলাদেশিদের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ইমেজ মারাত্মকভাবে ক্ষুণœ হচ্ছে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, আরও অনেক নামিদামি হাসপাতাল রয়েছে যাদের বিরুদ্ধে প্রায়ই রোগী হয়রানি ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যায়। করোনাভাইরাস মহামারীর সময় যেখানে পুরো পৃথিবীর মানুষ বাঁচার জন্য লড়াই করছে এমন পরিস্থিতিতেও দেশের কিছু হাসপাতাল সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে প্রতারণা করে চলেছে। এদের মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানই রোগীদের কাছ থেকে গলা কাটা ফি নিয়ে থাকে। আবার আইসিইউতে নেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি না হলেও রোগীকে আইসিইউতে পাঠানো হয়। মালিবাগের একটি হাসপাতালে আইসিইউ না থাকা সত্ত্বেও একটি বন্ধ কেবিনে রোগীকে আটকে রেখে আইসিইউর বিল আদায়ের অভিযোগ ওঠে।

এর আগেও নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগে বহুবার এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। সম্প্রতি করোনাভাইরাসের চিকিৎসা, টেস্টসহ নানা ব্যাপারে জালিয়াতি ও প্রতারণা করায় আবারো আলোচনায় এসেছে এসব প্রতিষ্ঠান। ফলে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

সূত্র জানায়, মাত্র কয়েক দিন আগে একটি হাসপাতাল একজন করোনা রোগীকে ১২ দিন ভর্তি রাখার পর রোগী মারা গেলে রোগীর স্বজনদের ৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকার বিল ধরিয়ে দেয়। এতে ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা দেখানো হয় শুধু বেড ভাড়া। এমন ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে। এ নিয়ে সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।

বিভিন্ন হাসপাতালে নানা সময়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানকালে দেখা যায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়া আইসিইউ, সিসিইউ পরিচালিত হচ্ছে। অনেক জায়গায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোনো প্রকার অনুমোদন ছাড়াই করোনা শনাক্তকরণ টেস্ট করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়া রেজিস্ট্রেশনবিহীন বিদেশি ওষুধ বিক্রি, মেয়াদোত্তীর্ণ রক্ত সংরক্ষণ করা হচ্ছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোগীর শ্লীলতাহানির মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাও ঘটছে। নানা অনিয়মের অভিযোগে তারকা হাসপাতালগুলোকে বিপুল অঙ্কের টাকা জরিমানা করা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.