Business is booming.

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের ৫ হাজার কোটি টাকা

43

সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে জমছে বাংলাদেশিদের অর্থের পাহাড়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত রয়েছে বাংলাদেশিদের। দেশ থেকে অর্থ পাচার রোধে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও পাচার কমছে না। নানাভাবে দেশ থেকে অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ পাচারের অর্থে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গড়ে তুলছেন দৃষ্টিনন্দন বাড়ি, রিসোর্ট। আবার কেউ কেউ জমা রাখছেন সুইস ব্যাংকে। ফলে সুইস ব্যাংকগুলোতে জমছে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পাহাড়।

সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) প্রকাশিত গতকালের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি এখনো গচ্ছিত রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আর প্রথম স্থানে রয়েছে ভারত। এর পরই রয়েছে পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার অবস্থান। কিন্তু পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ভারতের নাগরিকদের গচ্ছিত সম্পদের পরিমাণ অর্ধেকে নেমেছে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর পাকিস্তানের নাগরিকদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণও পাঁচ বছরের ব্যবধানে কমেছে এক-তৃতীয়াংশ। কিন্তু বাংলাদেশের নাগরিকদের কমেছে মাত্র ১৩০ কোটি টাকা। এটিকে উদ্বেগজনক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এ দেশের অর্থ অন্য দেশে অবৈধভাবে পাচার করে মূলত দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিরই ক্ষতি করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরেও বাংলাদেশিদের আমানত ছিল ৫ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা। আর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এই আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা। সে হিসাবে সুইস ব্যাংকগুলো থেকে এক বছরের ব্যবধানে মাত্র ১৩০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন বাংলাদেশিরা। একইভাবে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোও কালো টাকার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে, যা ভারত-পাকিস্তানে কার্যকর হলেও বাংলাদেশে এই নীতি মোটেই কার্যকর প্রমাণিত হয়নি। অথচ বাংলাদেশ সরকার গত পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে আসছে। আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিনা প্রশ্নে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এমনকি শেয়ারবাজার, জমি, ফ্ল্যাটসহ আবাসন খাতে অবাধে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে কালো টাকা। এর পরও দেশ থেকে অর্থ পাচার কাক্সিক্ষত হারে কমছে না।

প্রায় দুই শ বছর ধরে এ ধরনের ব্যাংকিং সেবার কেন্দ্র ইউরোপের দেশটি। ৮০ লাখ মানুষের দেশ সুইজারল্যান্ডে ব্যাংকের সংখ্যা ২৪৬টি। গ্রাহকের নাম-পরিচয় গোপন রাখতে তারা অত্যন্ত কঠোরতা অবলম্বন করে থাকে। গ্রাহকদের তথ্যের সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা করে সুইস ব্যাংকগুলো।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অবৈধ আয় ও কর ফাঁকি দিয়ে জমানো টাকা রাখা হয় সুইস ব্যাংকে। বাংলাদেশে প্রতিবছর একদিকে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কাক্সিক্ষত হারে কমছে না। ফলে সম্পদগুলো মাত্র কয়েক শতাংশ মানুষের কাছে কেন্দ্রীভূত।

সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) থেকে গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশিদের আমানত দাঁড়িয়েছে ৬০ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঁ; বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা। ঠিক এক বছর আগে, এ অঙ্ক ছিল ৬১ কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা ৫ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা।

সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষণা অনুযায়ী, কোনো বাংলাদেশি নাগরিকত্ব গোপন রেখে অর্থ জমা রেখে থাকলে ওই টাকা এ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত নয়। গচ্ছিত রাখা স্বর্ণ বা মূল্যবান সামগ্রীর আর্থিক মূল্যমানও হিসাব করা হয়নি এই প্রতিবেদনে।

আগের বছরের তুলনায় বাংলাদেশিদের আমানত মাত্র ১৩০ কোটি টাকা কমলেও দক্ষিণ এশিয়ার অন্য সব দেশের আমানত কমেছে অনেক। পঁাঁচ বছরে ভারতীয়দের জমা কমেছে অর্ধেক। মাত্র দুই বছরে পাকিস্তানিদের আমানত কমেছে এক-তৃতীয়াংশ।

এদিকে অর্থ পাচার নিয়ে কাজ করে আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) হিসাবে, বছরে বাংলাদেশ থেকে গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, সুইজারল্যান্ডে গোপনীয়তা কিছুটা কমায় অনেকে এখন অবৈধ টাকা জমা রাখার জন্য ঝুঁকছেন লুক্সেমবার্গ, কেম্যান আইল্যান্ড, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, পানামা কিংবা বারমুডার মতো ট্যাক্স হ্যাভেনের দিকে।

সুইস ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বাংলাদেশিদের আমানত বাংলাদেশি মুদ্রায় ২০১৪ সালে ছিল ৪ হাজার ৫৮ কোটি টাকা, ২০১৫ সালে ৪ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা, ২০১৬ সালে ৫ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা, ২০১৭ সালে ৪ হাজার ৬৯ কোটি টাকা, ২০১৮ সালে ৫ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা এবং ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা।

আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ভারতের সবচেয়ে বেশি- ৮৯ কোটি ২০ লাখ সুইস ফ্রাঁ এবং বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়- ৬০ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঁ। সবচেয়ে কম রয়েছে শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের- মাত্র ৪ কোটি সুইস ফ্রাঁ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পাচার রোধে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয় এগুলোর বেশির ভাগই কার্যকর নয়। ফলে পাচার ঠেকানো দূরের কথা, কমানোও যায় না। এর জন্য সুশাসন, স্বচ্ছতা আর জবাবদিহি নিশ্চিত করার বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি।

সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.