Business is booming.

করোনাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে

69

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, দুর্যোগকালীন এই সময়ে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। গতকাল একান্ত আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, করোনার সংকটে আমরা এখনো নিয়মিত বৈঠক করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি, যাতে কোনো সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী সুবিধা নিতে না পারে। মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা ও সুরক্ষা সেবা বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ছাড়াও এই দুই বিভাগের অন্তর্গত পুলিশ, বিজিবি, আনসার, ফায়ার সার্ভিস, কারা অধিদফতর, পাসপোর্ট অধিদফতরসহ সব বাহিনী ও বিভাগের সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করছেন।

বিশেষ করে সাধারণ ছুটি শুরুর পর থেকে দুই বিভাগের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও বাহিনীর সদস্যরা কঠোর পরিশ্রম করছেন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় সেল গঠন করে ওই সেলে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা নিয়মমাফিক দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি বলেন, করোনা দুর্যোগে বাংলাদেশের সামনের সারির যোদ্ধা হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশের অগ্রণী ভূমিকা ইতোমধ্যে সবার নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। ঘর থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে মানবিক পুলিশিংয়ের গল্প সবার মুখে মুখে। বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা করোনা সংক্রমণ থেকে মানুষকে সচেতন করতে নিরলস কাজ করছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পুলিশ এখন মানুষের আস্থার একমাত্র ঠিকানায় পরিণত হয়েছে। এখন রাস্তায় দেখা যায় পুলিশের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন অভুক্তরা।

করোনায় কর্মহীন চালক হেলপারদের পুলিশের মানবিক সহায়তার পাশাপাশি ও শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন পুলিশ। করোনা আক্রান্ত গভর্বতী নারীর পাশে পুলিশ, করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তির লাশ দাফন করে পুলিশ। একইভাবে সাগর পাড়ের অসহায় জেলেদের পাশে পুলিশ। জ¦র নিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা যুবককে যখন কেউ ছুঁয়ে দেখছে না সে সময় ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। সমাজের পিছিয়ে পড়া হরিজন, কামার ও মুচি সম্প্রদায়ের মানুষের পাশেও দাঁড়িয়েছে মানবিক পুলিশ। এমন কি যখন করোনার কারণে কৃষক ধান কাটতে পারছিল না তখন পুলিশ সদস্যরা কৃষকের ধান কাটতে সহায়তা করেছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশজুড়ে প্রচারণা, গুজব ঠেকানো, ত্রাণ বিতরণ, অপরাধের প্রতিকার ও প্রতিরোধ সবই এখন সমান তালে করছে বাংলাদেশ পুলিশ। আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, মানুষ যখন সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত তখন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর এই ত্যাগ স্বীকার এক অন্যতম নজির স্থাপিত হতে যাচ্ছে সাম্প্রতিক করোনা ভাইরাসজনিত সংকটে। কিছু নিয়ম বা প্রথা ভেঙে পুলিশের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সদস্যরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

রীতি সীমানার বাইরেরও একটি জগৎ থাকে, পুলিশ সে সীমানার প্রান্তে এসে ভুখা নাঙ্গা ও বিব্রত-বিপর্যস্ত মানুষের পরিত্রাণে সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, সম্প্রতি চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত কর্মীদের বাড়িতে প্রবেশে বাধা দেওয়ার মতো অমানবিক ঘটনা ঘটেছে। কোনো পূর্ব সিদ্ধান্ত ছাড়াই পুলিশ এই অমানবিকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যকর্মীদের বাসায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। রাতভর দুর্দশাগ্রস্ত ভিকটিম স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে কোনো রকম বলপ্রয়োগ না করেই ধৈর্য ধরে বাড়িওয়ালাদের বুঝাতে চেষ্টা করেছে এ রকম অন্যায় কাজ থেকে সরে আসতে। বেশিরভাগ  ক্ষেত্রেই এতে ফল পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, গত ১৮ জুন পর্যন্ত পুলিশের মোট ৮ হাজার ২৯৬ জন সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং ২৯ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সারা দেশব্যাপী কাঁচামাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সহায়তায় মালামাল বহনকারী যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয়েছে। উ™ভূত পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং মজুতদার ও কালোবাজারি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে পুলিশ। এ ছাড়াও সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিকালে বিভিন্ন কোম্পানির আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদি পরিবহনের এবং বিভিন্ন ব্যক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে জরুরি প্রয়োজনে ভ্রমণের অনুমতি প্রদান করছে বাংলাদেশ পুলিশ।

মন্ত্রী বলেন, করোনাকালীন সময়ে কারা অধিদফতর সারা দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে বন্দী কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে। সেখানে লঘু অপরাধে যারা বন্দী রয়েছেন কিংবা যাদের সাজার মেয়াদ প্রায় শেষ পর্যায়ে কিন্তু বহুদিন ধরে বন্দী, বিশেষ বিবেচনায় তাদের মুক্তি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে যাতে কোনো বন্দী আক্রান্ত না হন সে জন্যও নানা উদ্যোগ চলমান আছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, করোনার সময় বিদেশি নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশে আগমনী ভিসা সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের মধ্যে যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তারা যেন কোনো সমস্যায় না পড়েন সে জন্য তাদের ভিসা বিশেষ ব্যবস্থায় নিজ নিজ দূতাবাসে পাঠানো হয়েছে।

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.